নিম্ন তাপমাত্রায় চিংড়ি সংরক্ষণের প্রকারভেদ

এসএসসি(ভোকেশনাল) - শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-২ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | | NCTB BOOK

তাপমাত্রার ওপর ভিত্তি করে নিম্ন তাপমাত্রায় মাছ সংরক্ষণ পদ্ধতিকে দুইভাগে ভাগ করা যায়।

Content added By

শীতলীকরণ প্রক্রিয়ায় চিংড়ি সংরক্ষণ পদ্ধতি

স্বল্প সময়ের জন্য চিংড়ির সজীবতা রক্ষার্থে শীতলীকরণ অত্যন্ত সুবিধাজনক পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে চিংড়ির তাপমাত্রা হিমাঙ্কের কাছাকাছি আনা হয়, তবে হিমাঙ্কের নিচে নয়। এ পদ্ধতি খুব দ্রুত ও দক্ষতার সাথে পরিচালনার মাধ্যমে খুব ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে দীর্ঘ সময়ের জন্য সংরক্ষণে শীতলীকরণ পদ্ধতি অনুপযোগী। আহরণের পরপরই যদি চিংড়িকে অন্তর্বর্তীকালীন সংরক্ষণের প্রয়োজন হয়, যেমন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে প্রেরণ, অবতরণ কেন্দ্র থেকে বাজারে বা প্রক্রিয়াজাত কারখানায় প্রেরণের প্রয়োজন হয় তবে এ পদ্ধতি অবলম্বনে ভালো ফল পাওয়া যায়। শীতলীকরণের প্রধান লক্ষ্য হলো মাছের তাপমাত্রাকে ০ ডিগ্রি সে. এর কাছাকাছি নিয়ে আসা। শীতলীকরণের উপায়সমূহ হলো-

ক) বরফ ব্যবহার করেঃ নিম্ন তাপমাত্রায় মাছ সংরক্ষণের একটি স্বল্পকালীন পদ্ধতি। স্বাদু পানি থেকে উৎপাদিত টুকরো বা গুঁড়ো বরফ ব্যবহার করে চিংড়িকে আচ্ছাদিত করা হয়। ফলে মাছের পচন সাময়িকভাবে রাখে করা যায়। কারণ সঠিকভাবে চিংড়ির তাপমাত্রা (০° সে. ৪ ডিগ্রি সে.) কমিয়ে আনার ফলে এনজাইম, জারণ ও ব্যাকটেরিয়াজনিত পরিবর্তন কমিয়ে দেয় এবং বরফগলা পানি চিংড়ির উপর দিয়ে প্রবাহিত করে এবং ব্যাকটেরিয়া, রক্ত, শ্লেষ্মা ইত্যাদি ধৌত করে।

খ) সংরক্ষক ও বরফ ব্যবহার করেঃ অনেক সময় সংরক্ষিত মাছের গুণাগুণ ভালো রাখার জন্য ও বরফের গুণাগুণ উন্নয়নের জন্য বরফের সাথে কিছু ব্যাকটেরিয়ানাশক বা অন্য যে কোনো ধরনের সংরক্ষক ব্যবহার করা হয়। এ কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যগুলারে নাম হলো- সোডিয়াম বেনজোয়েট, ফিউমারিক অ্যাসিড, কার্বন ডাই অক্সাইড, ডাই সোডিয়াম ফসফেট, বেনজোয়িক অ্যাসিড, সোডিয়াম নাইট্রাইট, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ইত্যাদি।

গ) শীতল সামুদ্রিক পানি ব্যবহার করেঃ বরফ ব্যবহারের বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে ঠান্ডা সামুদ্রিক পানিতে চিংড়িকে ডুবিয়ে রেখে শীতলীকরণ করা যায়। সামুদ্রিক ট্রলারে এই পদ্ধতি কার্যকরভাবে ব্যবহার করা হয়। ট্রেলারের মধ্যে কোনো সুবিধাজনক পাত্র বা ট্যাংকে সমুদ্রের পানি যান্ত্রিকভাবে কমপ্রেসর এবং কুলিং পাইপের সাহায্যে বা বরফ মিশ্রিত করে ২ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় নিয়ে আসা হয়। বৃহৎ ফ্রিজিং ট্রলারে আহরিত মাছকে হিমায়িতকরণের পূর্বে এভাবে শীতলীকরণ করা হয়।

Content added By

হিমায়িত প্রক্রিয়ায় চিংড়ি সংরক্ষণ পদ্ধতি

হিমায়িতকরণ পদ্ধতি শীতলীকরণ পদ্ধতি হতে অধিক কার্যকর। চিংড়িকে দীর্ঘ সময়ের জন্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে এ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। হিমায়িতকরণ পদ্ধতিতে মাছ বা মৎস্যজাত দ্রব্যের দেহের তাপমাত্রা হিমায়ন যন্ত্র ব্যবহার করে -৮ ডিগ্রি সে. বা তারও কম রাখা হয়। সাধারণত চিংড়িকে -৩০ ডিগ্রি সে. থেকে ৪০ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় হিমায়িত করা হয়।

মাছের শরীরে প্রচুর পানি থাকে যা ০ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় বরফে পরিণত হয় না। কারণ এ পানির সাথে লবণ ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ থাকে। মাইনাস ১ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় মাছের দেহের পানি জমতে শুরু করে এবং মাইনাস ৫ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় প্রায় ৮০% পানি বরফে পরিণত হয়। এ অবস্থায় অহিমায়িত পানিতে লবণের ঘনত্ব ক্রমে বাড়তে থাকে। ফলে মাছ পূর্ণ হিমায়িত হতে আরও বেশি তাপমাত্রা কমানোর প্রয়োজন হয়ে পড়ে। মাইনাস ৩০ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় ও মাছের ভিতরের ১০% পানি অহিমায়িত থাকে, বিধায় মাইনাস ৩৫-৪০° সে. পর্যন্ত তাপমাত্রা ব্যবহার করা হয়। চিংড়ি হিমায়িতকরণে তিনটি স্তরে তাপমাত্রা নিচের দিকে নামে।

প্রথম স্তরে তাপভাত্রা খুব দ্রুত এবং ভালভাবে ০ ডিগ্রি সে. বা এর সামান্য নিচ পর্যন্ত নামে। দ্বিতীয় স্তরে তাপমাত্রা ০° থেকে -১৭°সে পর্যন্ত নামে ঐখানে প্রায় স্থির থাকে। তৃতীয় পর্যায়ে এসে তাপমাত্রা আরও নিচে নামে এবং অবশিষ্ট অহিমায়িত অংশ হিমায়িত হয়। এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো হিমায়িতকরণের দ্বিতীয় স্তরে, সবচেয়ে সময় বেশি লাগে এবং ঐ সময়ে তাপমাত্রা সহজে নিচে নামে না বা খুব সামান্য নিচে নামে। এই স্তর বা সময়টাকে হিমায়িতকরণের সংকটকাল বলা হয়। কারণ ভালোভাবে চিংড়িকে হিমায়িত করতে হলে এ সময়টা অতি দ্রুত অতিক্রম করতে হবে। তা না হলে হিমায়িত চিংড়ির গুণাগুণে ত্রুটি দেখা দিতে পারে। তৃতীয় স্তরে এসে তাপমাত্রা আরও নিচে নামে এবং অবশিষ্ট অহিমায়িত অংশ হিমায়িত হয়।

Content added By

হিমায়ক যন্ত্রের প্রকারভেদ

মাছ বা চিংড়ির হিমায়িতকরণের জন্য বিভিন্ন ধরনের হিমায়ক যন্ত্র বা ফ্রিজার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। নিয়ে কয়েকটি হিমায়ক যন্ত্রের বর্ণনা দেয়া হলো-

ক) এয়ার ব্লাস্ট ফ্রিজারঃ এ ধরণের ফ্রিজারের ভিতর দিয়ে ঠান্ডা বাতাসের বাষ্প প্রবাহিত করে মাছ বা অন্যান্য খাদ্য দ্রব্যকে হিমায়িত করা হয়। এয়ার ব্লাস্ট ফ্রিজার দুই প্রকারের হয়ে থাকে। যথা-

(১) অনবরত ফ্রিজারঃ এ প্রকার ফ্রিজারে হিমায়িতকরণের সময় দ্রব্য বা Product ঘুরতে থাকে। হিমায়কের ভিতর এক পাশ থেকে মাছ বা দ্রব্যাদি ঢুকানো হয় এবং অন্য পাশ দিয়ে হিমায়িত উপাদান বের করা হয়।

(২) ব্যাচ ফ্রিজারঃ ব্যাচ ফ্রিজারে মাছ বা চিংড়ি বা দ্রব্য প্রবেশ করানো হয় এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত রেখে হিমায়িত করা হয়।
বিভিন্ন প্রকার ফ্রিজারের মধ্যে এয়ার ব্লাস্ট ফ্রিজার সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। কারণ এর ব্যবহারে সুবিধাগুলো হচ্ছে- এ জাতীয় ফ্রিজার বহুমুখী কাজে ব্যবহার করা হয়, এ জাতীয় ফ্রিজারে হিমায়িতকরণে কম খরচ করা হয় এবং হিমায়তকরণের সময় কম পরিচর্যা করলেই চলে।

খ) কন্ট্যাক্ট প্লেট ফ্রিজারঃ এ ধরনের হিমায়ক যন্ত্রে চিংড়িকে সরাসরি হিমায়িত প্লেটের ওপর রেখে হিমায়িত করা হয়। কন্ট্যাক্ট প্লেট ফ্রিজার চার প্রকারের হয়ে থাকে। যেমন- প্লেট ফ্রিজার, ব্যান্ড ফ্রিজার, রোটারি ফ্রিজার এবং ড্রাম ফ্রিজার। এগুলোর মধ্যে প্লেট ফ্রিজার সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের ফ্রিজারে চিংড়িকে ফাঁপা ধাতুর প্লেটের মধ্যে রাখা হয় যার মধ্যে শীতলীকরণের জন্য রেফ্রিজারেন্ট প্রবাহিত করা হয়। 

বাণিজ্যিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে কন্ট্যাক্ট প্লেট ফ্রিজার তাপ নিরোধক পৃথক রুমে ( Insulated room) স্থাপিত থাকে যেখানে মাছকে প্যাকেট বা ব্লক সংযুক্ত আকারে হিমায়িত করা হয়। প্রতিটি মাছ বা চিংড়ির ব্লক ৫০-৬০ মিলিমিটার পুরু হয়। ব্লক তৈরির জন্য প্লেটগুলোতে সংযুক্ত পাম্পের সাহায্যে ঠান্ডা লবণ পানি (Cold brine), অ্যামোনিয়া বা রেফ্রিজারেন্ট ১২ বা ২২ প্রবাহিত করা হয়। ফলে মেটাল প্লেটের তাপমাত্রা ৩৫-৪০ ডিগ্রি সে. হয়ে থাকে। মৎস্যজাত দ্রব্য দ্রুত হিমায়িতকরণের জন্য কন্ট্যাক্ট প্লেট ফ্রিজার ব্যবহার করা হয়। সাধারণত চিংড়ি ও অন্যান্য ছোট ছোট মাছ ব্লক আকারে এই প্রকার ফ্রিজে হিমায়িত করা হয়।

গ) ইমারসন ফ্রিজার: এ ক্ষেত্রে মাছকে নিম্ন তাপমাত্রায় তরল পদার্থে ডুবানো বা নিমজ্জিত করা হয়। এভাবে সরাসরি ঠান্ডা তরলের মধ্যে রেখে মাছের দেহের তাপমাত্রা কমানোর পদ্ধতি এয়ার ব্লাস্ট ফ্রিজারে ঠান্ডা বাতাস প্রয়োগ থেকে উৎকৃষ্ট। পানির ফ্রিজিং পয়েন্টের চেয়ে এ পদ্ধতিতে ব্যবহৃত তরল পদার্থের ফ্রিজিং পয়েন্ট অনেক বেশি হয়ে থাকে। বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য ইমারসন ফ্রিজারের কোনো আদর্শ নকশা নেই এবং বিভিন্ন প্রকার ব্যবহারের জন্য বিভিন্নভাবে পরিবর্তন করা হয়ে থাকে। সাধারণত ঠান্ডা লবণ পানি অথবা কোন রেফ্রিজারেন্ট বাম্পকে পাম্প এর সাহায্যে ক্রমাগত মৎস্যজাত দ্রব্যের ওপর প্রবাহিত করা হয় অথবা মৎস্যজাত দ্রব্যকে একমুখী ঠান্ডা দ্রবণের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করানো হয়। মাছ ধরার ট্রলারে চিংড়ি হিমায়িতকরণে ইদানিংকালে লবণ পানির দ্রবণের সাথে ২০% গ্লুকোজ এবং ২০% খাবার লবণ যোগ করে সাফল্যজনকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ইমারসন ফ্রিজারে মাছ ধরার ট্রলারে প্যাকেটকৃত নয় (Unpacked) এমন মাছের হিমায়িতকরণের জন্য উপযুক্ত।

ঘ) শার্প ফ্রিজার: শার্প ফ্রিজার একটি পৃথক ইনসুলেটেড বা তাপ নিরোধক ঘর যার তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সে. রাখা হয়। এ ফ্রিজারে বিভিন্ন আকারের কয়েল দ্বারা তৈরি সেলফ থাকে যার ভিতর দিয়ে ঠান্ডা লবণ পানি, অ্যামোনিয়া বা অন্যান্য রেফ্রিজারেন্ট প্রবাহিত করা হয়। হিমায়িতকরণের সময় মাছ বা চিংড়িকে সরাসরি সেলফে বা অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি প্যানের ওপর রাখা হয়। এ পদ্ধতিতে তাপমাত্রার পরিবর্তন খুব ধীর গতিতে হয়। কারণ মৎস্যদ্রব্যের সম্পূর্ণ উপরিভাগ (surface) ফ্রিজারের পাইপের সংস্পর্শে থাকতে পারে না। এবং ফ্রিজারের ভিতর বায়ু চলাচল সীমিত। এ প্রকার হিমায়ন পদ্ধতি ধীরগতি সম্পন্ন ও পুরাতন বিধায় এর ব্যবহার বর্তমানে অত্যন্ত সীমিত। 

Content added || updated By
Promotion